রক্তস্বল্পতা কি ? এর কারণ , লক্ষণ, চিহ্ন, চিকিৎসা এবং উপদেশ ?

 রক্তস্বল্পতা

blood cells

 রক্তস্বল্পতা কি? 

মানবদেহে রক্তে গড়ে ১৪.৮ গ্রাম % হিমোগ্লোবিন থাকে। রক্তে ১১ গ্রাম % হিমোগ্লোবিন চেয়ে কম হলে রক্তস্বল্পতা বলা হয়। 

তবে রক্তে হিমোগ্লোবিন পরিমাণ সকলের সমান নয়। 

স্বাভাবিক পুরুষদের হিমোগ্লোবিন মাত্রা - ১৪-১৬ গ্রাম/১০০ মিলি লিটার

 স্বাভাবিক মহিলাদের হিমোগ্লোবিন মাত্রা - ১২-১৪ গ্রাম/১০০ মিলি লিটার

 নবজাতকের - ১৯ গ্রাম/১০০ মিলি লিটার 

শিশুদের - ১১.৫ গ্রাম/১০০ মিলি লিটার 

হিমোগ্লোবিনের মাত্রানুযায়ী রক্তস্বল্পতাকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। 

স্বাভাবিক - ১১-১৪/১০০ মিলি লিটার 

স্বল্পমাত্রার রক্তস্বল্পতা (+) - ৮-১০.৯/১০০ মিলি লিটার ১২৫ 

মধ্যম মাত্রার রক্তস্বল্পতা (++) - ৬-৭.৯ গ্রাম/১০০ মিলি লিটার 

অত্যাধিক মাত্রার রক্তস্বল্পতা (+++) - ৬ গ্রাম/১০০ মিলি লিটার এর কম

রক্তস্বল্পতার কারণ

 - খাদ্যে লৌহ, আমিষ এবং ভিটামিন-বি এর অভাব। 

- বক্রকৃমির কারণে অন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ। 

- মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। 

- ক্ষতস্থান থেকে দ্রুত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।

 - ম্যালেরিয়ার কারণে লোহিত কণিকা ধ্বংস হয়ে যাওয়া।

 - কম ওজনের শিশু এবং যমজ বা‛চাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হয়।

 - গর্ভকালে মায়ের রক্তস্বল্পতা থাকলে শিশু রক্তস্বল্পতা নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। 

- ঘন ঘন বাচ্চা হওয়া।

 - ৬ মাস বয়সের পর শিশুদের শুধুমাত্র দুধ খাওয়ালে শিশুর রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

 - অস্থিমজ্জার অসুখের কারণে কম রক্তকণিকা উৎপন্ন হওয়া।

 - লোহিত কণিকা ভেঙ্গে গেলে (Hemolytic Anaemia) রক্তস্বল্পতা হয়।

রক্তস্বল্পতার চিহ্ন ও লক্ষণ ঃ

 - হিমোগ্লোবিন কারণেই রক্তের রং লাল হয়। রক্তস্বল্পতায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন স্থানের ঝিল্লি ফ্যাকাশে দেখায়।

 - চোখের পাতার ভেতরের দিক (Conjunctiva) ফ্যাকাশে দেখাবে।

 - ঠোঁট ও জিহ্বার ঝিল্লি ফ্যাকাশে দেখাবে। 

- হাতের তালু এবং নখে ফ্যাকাশে দেখাবে।

 - রোগী দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠার অভিযোগ করতে পারে। 

- রক্তের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে শরীরে পানি (Odema) দেখা দিতে পারে। 

- রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে শ্বাস এবং নাড়ীর গতিও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী হবে।

 - তীব্র রক্তস্বল্পতার কারণে হৃদপিন্ডের কাজ বাধাগ্রস্থ হয়ে যেতে পারে (ঐবধৎঃ ঋধরষঁৎব)।

রোগীর রক্তস্বল্পতা নির্ণয় ঃ

আমাদের শরীরের যেসব জায়গায় মিউকাস মেমব্রেন খুবই পাতলা সেখান দিয়ে ভেতরের প্রবাহমান রক্তের রং দেখা যায়। রক্তস্বল্পতা হলে এই সব মিউকাস মেমব্রেন ফ্যাকাশে দেখায়।

 সাধারণত: চোখের নীচের পাতার ভেতরে, জিহ্বা এবং ঠোঁটের মিউকাস মেমব্রেনে রক্তস্বল্পতা পরীক্ষা করা হয়।

 চোখের নীচের পাতায় মিউকাস মেমব্রেন পরীক্ষা করার জন্য-  মিউকাস মেমব্রেন পরীক্ষা করার আগে কি করতে যাচ্ছেন রোগীকে ব্যাখ্যা করতে হবে।

-  রোগীর মুখোমুখি বসুন।

-  দু’হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চোখের নীচের পাতা নিচের দিকে টেনে ধরুন।

- এখন রোগীকে উপরের দিকে তাকাতে বললেই চোকের মিউকাস মেমব্রেন স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। 

- বেশ কয়েকজনের চোখের পাতা পরীক্ষা করলেই মোটামুটি ধারণা হয়ে যাবে রক্তস্বল্পতায় মিউকাস মেমব্রেন কেমন দেখায়। 

- জিহ্বার রক্তস্বল্পতা দেখায় জন্য রোগীকে জিহ্বার বের করতে বলতে হবে এবং জিহ্বার আগা নিরীক্ষণ করতে হবে।

রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা ঃ

 ফেরাস সালফেট বড়ি ৬০ মিঃ গ্রাঃ আয়রন+ফলিক এসিড ০.২৫ মিঃ গ্রাম। 

সরবরাহঃ প্রতি ট্যাবলেট ফেরাস সালফেট ৬০ মিঃ গ্রাঃ এবং ফলিক এসিড ০.২৫ মিঃগ্রাঃ। 

ব্যবহারঃ গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের রক্তস্বল্পতা এবং শরীরের লে․হের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতায় এই বড়ি খুবই উপাকারী।

ঔষধের মাত্রা ঃ

প্রতি ট্যাবলেট ফেরাস সালফেট ৬০ মিঃ গ্রাঃ আয়রন+ফলিক এসিড ০.২৫ মিঃ গ্রাম

০-১ বৎসর

১/৪ করে দিনে ২ বার

১-৫ বৎসর

১/২ টি করে দিনে ৩ বার

৬-১২ বৎসর

১ টি করে দিনে ২ বার

পূর্ণ বয়স্ক 

১টি করে দিনে ৩ বার


কতদিন খাওয়াতে হবেঃ প্রয়োজন অনুসারে অর্থাৎ রক্তস্বল্পতা সেরে না উঠা পর্যন্ত (সাধারণতঃ ১-৩ মাস)। 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার সময়কাল গর্ভকালীন সময় এবং প্রসবের পর তিন মাস পর্যন্ত চিকিৎসা চালাতে হবে।



উপদেশ ঃ

- উত্তম শোষনের জন্য ঔষধ খালি পেটে, খাবারের এক ঘন্টা আগে বা দুই ঘন্টা পরে খেতে হবে। - খাদ্যের আয়রণ শোষনের জন্য লেবু খাবেন। কারণ ভিটামিন-সি আয়রন শোষনে সাহায্য করে।  - আয়রণ বড়ি খেলে পেটের সমস্যা, সাথে বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।

 - অশোষিত আয়রণের কারণে পায়খানার রং কালো হয়। এতে কোন ক্ষতি হয় না।

 - আয়রণ যুক্ত খাবার : যেমন- সবুজ শাক-সবজি, কচু শাক, সীমের বীচি, কচু, কলা, পেয়ারা, ডাল ও অন্যান্য বীচি জাতীয় খাবার; আটার রুটি, কলিজা এবং সব রকম স্বাভাবিক খাওয়ার কথা বলতে হবে। 

- বাড়ীর আশে পাশে ছোট বাগান করে শাক-সবজি লাগানো শিখাতে হবে এবং হাঁস মুরগী পালনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। 

- শাক-সবজি ধুয়ে কেটে রান্না করার জন্য বলতে হবে যাতে খাবারের লৌহ নষ্ট না হয়।

 - নির্দিষ্ট সময়ে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ক্লিনিকে আসতে বলতে হবে।



আশা করি আমাদের প্রত্যেকটি পোষ্ট আপনাদের ভালোলাগবে এবং উপকারে আসবে 

স্বামী স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কি কোনো সমস্যা হয় ?

স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাওয়ার পর যে কাজগুলো করবেন না ?

দুধ -আনারস একসাথে খেলে কি মানুষ মারা যায় ? জেনেনিন এর সঠিক উত্তর 

পিরিয়ড চলাকালিন মেয়েরা যেসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন 

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্ষতি কী  এবং জেনে নিন ঘুম না হলে কী করবেন ?

রাতকানা রোগ কী ? রাতকানা রোগ কেন হয় ? এবং এর প্রতিকার 

রক্তস্বল্পতা কি ? এর কারণ , লক্ষণচিহ্নচিকিৎসা এবং উপদেশ ?

কান পাকা রোগ কেন হয় এর কারণ,লক্ষণ,চিহ্ন এবং চিকিৎসা

কনজাংটিভাইটিস বা ( চোখ উঠা ) কি ? এর কারণ , লক্ষণ/চিহ্ন , চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ 

 

NOTE: সকল ঔষধ রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন